তথ্য (Information):
কোনো কিছু সম্পর্কে ধারণা বা জ্ঞান লাভ করার জন্য সে সম্পর্কিত বিভিন্ন ডেটা বা উপাত্তকে যৌক্তিক পরিসজ্জায় উপস্থাপনাকে তথ্য বা Information বলা হয় ।
উপাত্ত (Data):
তথ্যের ক্ষুদ্রতম একক হলো ডেটা যা আসলে এলোমেলো বা অগোছালো কয়েকটি অক্ষর, সংখ্যা, চিহ্ন, ছবি ইত্যাদি , যা সুনির্দিষ্ট বা যথাযথ অর্থ বা ভাব প্রকাশে সক্ষম নয় । এটি সুনির্দিষ্ট ফলাফল পাওয়ার জন্য পরিচালিত প্রসেসিং এর কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । কোন শব্দ, সংখ্যা, ছবি, প্রতীক ইত্যাদি যে কোনো কিছুই উপাত্ত বা ডেটা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে । ডেটা এবং তথ্যকে আপাতদৃষ্টিতে এক মনে হলেও এদের মধ্যে সূক্ষ্ম কিছু পার্থক্য বিদ্যমান, যা নিম্নরুপ-
প্রযুক্তি (Technology):
গ্রিক শব্দ Techne (যার অর্থ হলো আর্ট) বা শিল্প, কারু কিংবা হাতের দক্ষতা এবং logia (শব্দ) এ দুয়ের সমন্বয়ে টেকনোলোজি শব্দটি গঠিত । প্রযুক্তি বলতে সাধারণভাবে কতিপয় কৌশল ও প্রক্রিয়ার সমন্বিত জ্ঞানকে বুঝায় ।
তথ্য প্রযুক্তি (Information Technology):
তথ্য প্রযুক্তি বলতে সাধারণত তথ্য রাখা এবং একে ব্যবহার করার প্রযুক্তিকেই বুঝানো হয় । একে ইনফরমেশন টেকনোলজিও (Information Technology – IT) নামে অভিহিত করা হয় ।
তথ্য প্রযুক্তি মূলত একটি সমন্বিত প্রযুক্তি যা যোগাযোগ, টেলিযোগাযোগ, অডিও, ভিডিও, কম্পিউটিং, সম্প্রচারসহ আরো বহুবিধ প্রযুক্তির সম্মিলনে দীর্ঘদিন ধরে চর্চার ফলে সমৃদ্ধি লাভ করে তথ্য প্রযুক্তিরুপে আবির্ভূত হয়েছে । সার্বিকভাবে বলতে গেলে,
কম্পিউটার এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ, একত্রীকরণ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং বিনিময় বা পরিবেশনের ব্যবস্থাকে তথ্য প্রযুক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ।
তথ্য প্রযুক্তির সাথে যোগাযোগ মাধ্যমের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক । তাই বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলা (Information and Communication Technology – ICT) বলা হয় । বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির নীতিমালা অনুসারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হলো –
“যেকোনো প্রকারের তথ্যের উৎপত্তি, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, সঞ্চালন এবং বিচ্চুরণে ব্যবহৃত প্রযুক্তি ।”
তথ্য প্রযুক্তির জনকঃ
ক্লাউডি এলউড শ্যানন (Claude Elwood Shannon) ১৯১৬ সালের ৩০ এপ্রিল আমেরিকার মিশিগান রাজ্যে জন্ম নেয়া এই আমেরিকান গণিতবিদকে তথ্য প্রযুক্তির জনক হিসেবে অভিহিত করা হয় । ১৯৩৭ সালে MIT এর ছাত্র থাকাকালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি ডিজিটাল সার্কিট ডিজাইন থিয়েরি আবিষ্কার করেন । ১৯৪৮ সালে “A Mathematical Theory of Information” নামে তার যে পেপারটি প্রকাশিত হয়, এর কারণেই তাকে তথ্য প্রযুক্তির জনক বলা হয় ।
যোগাযোগ প্রযুক্তিঃ
যোগাযোগ প্রযুক্তি বা কমিউনিকেশন সিস্টেম হলো কম্পিউটার বা কোনো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থার সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি । এক কথায় যে প্রযুক্তির সাহায্যে নির্ভরযোগ্য উপায়ে উৎস হতে গন্তব্যে ডেটা কমিউনিকেশন প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হতে পারে তাকেই যোগাযোগ প্রযুক্তি বা কমিউনিকেশন টেকনোলোজি বলা হয়ে থাকে । যেমন- টেলিফোন, মোবাইল, ইন্টারনেট প্রভৃতি ।
যোগাযোগ প্রযুক্তির অবদান (The Contribution of IT):
আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে তথ্য প্রযুক্তির প্রভাব অপরিসীম । কম্পিউটারের নির্ভুল কর্ম সম্পাদন, দ্রুতগতি, স্মৃতি, স্বয়ংকৃত কর্মসম্পাদন, নেটওয়ার্ক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তথ্য আদান-প্রদান, যোগাযোগ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের জন্য তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগক্ষেত্র আজ সুবিস্তৃত । তথ্য প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য অবদান হলো –
- অপচয় রোধ করে এবং সময়সাশ্রয়ী হয় ।
- তথ্যের প্রাপ্যতা সহজ হয় ।
- তাৎক্ষণিক যোগাযোগ সম্ভব হয় । ফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট, ইমেইল, SMS, MMS প্রভৃতি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ ।
- প্রশিক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের গতিকে ত্বরান্বিত করে ।
- সর্বক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি পায় ।
- ব্যবসায়-বাণিজ্যে লাভজনক প্রক্রিয়া সৃষ্টি করে ।
- ই-কমার্সের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা যায় ।
- মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটায় ।
- ঘরে বসেই অনলাইনে বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহন করা যায় ।
- ঘরে বসেই বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ফোন ইত্যাদি বিল দেয়া যায় ।