টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা (Telecommunication System)
টেলিযোগাযোগ হলো সাধারণভাবে যে কোনো দূরত্বে যন্ত্র বা ডিভাইস নির্ভর পরস্পর যোগাযোগের পদ্ধতি । শুরুতে এই যোগাযোগ টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন নির্ভর থাকলেও আজ বিশ্বগ্রামের ধারণাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রযুক্তির উদ্ভাবনে আধুনিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা মানুষের ভৌগলিক দূরত্বের বাঁধাকে পুরোপুরি জয় করতে সক্ষম হয়েছে ।
মোবাইল কমিউনিকেশন (Mobile Communication)
বিশ্বগ্রাম বা বিশ্বায়নের অন্যতম শর্ত হলো বিশ্বের সকল মানুষ সর্বদা সংযুক্ত থাকতে সক্ষম হবে । মূলত টেলিকমিউনিকেশন ও তারবিহীন যোগাযোগের চরম উৎকর্ষিত একটি রূপ হলো মোবাইল কমিউনিকেশন । এর প্রায়োগিক উপাদান মোবাইল ফোন হলো একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যা বেস স্টেশনের একটি সেলুলার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ফুল ডুপ্লেক্স দ্বিমুখী রেডিও টেলিকমিউনিকেশনকে ব্যবহার করে থাকে । এর দ্বারা মানুষ যে কোনো সময় স্থির বা চলন্ত অবস্থায় যে কোনো স্থানে যোগাযোগ করতে সক্ষম ।
মোবাইল ফোনের জনকঃ
মার্কিন নাগরিক মার্টিন কুপার ১৯২৮ সালের ২৬ নভেম্বর শিকাগোতে জন্মগ্রহণ করেন । তারবিহীন যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেডিও স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট ফিল্ডের অন্যতম উদ্ভাবক ছিলেন তিনি । ১৯৭০ সালে তিনি প্রথম হাতে বহনযোগ্য ফোন উদ্ভাবন করেন । পরবর্তীতে এটিই মোবাইল ফোন হিসেবে ১৯৮৩ সালে বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসে । এজন্য তাকে মোবাইল ফোনের জনক বলা হয় ।
স্যাটেলাইট (Satellite)
স্যাটেলাইট শব্দের অর্থ হলো উপগ্রহ । আমরা জানি, চাঁদ হলো পৃথিবীর উপগ্রহ । তাহলে স্যাটেলাইট বলতে কি নতুন কোনো চাঁদকে বুঝানো হয়? আসলে চাঁদ হলো পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ, আর মানুষ তৈরি করেছে কৃত্রিম উপগ্রহ; যেগুলো চাঁদের মতই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।
স্যাটেলাইট হলো মহাকাশে উৎক্ষেপিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত কৃত্রিম উপগ্রহ। পৃথিবীর চারদিকে প্রদক্ষিণ করানোর জন্য আধুনিক স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহগুলোকে বায়ুমণ্ডলের বাইরে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে বিশেষ ধরনের তারবিহীন রিসিভার/ট্রান্সমিটার সংযুক্ত করে স্থাপন করা হয়ে থাকে ।
আবহাওয়া পূর্বাভাস, টেলিভিশন সম্প্রচার, রেডিও যোগাযোগ, ইন্টারনেট যোগাযোগ গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (Global Positioning System – GPS) এর মত বিভিন্ন যোগাযোগমূলক কাজে স্যাটেলাইট ব্যবহৃত হয় ।
২০১৮ সালের ১২ মে বাংলাদেশের নিজস্ব কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ (BS-1)-কে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্সের সর্বাধুনিক রকেট ফ্যালকন ৯ এর মাধ্যমে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় । বাংলাদেশের এই নিজস্ব বিএস-১ স্যাটেলাইটির নকশা ডিজাইন ও নির্মাণের কাজটি করেছে ফ্রান্সের থ্যালিস অ্যানেলিয়া স্পেস কোম্পানি ।
জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (Global Positioning System-GPS)
গ্লোবাল পজিশিনিং সিস্টেম বা জিপিএস হলো এমন একটি স্যাটেলাইট নির্ভর একমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা যার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের যে কোনো স্থানের অবস্থান নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা যায় । তথ্য প্রযুক্তির এ উৎকর্ষিত প্রযুক্তির ফলে এখন মোবালের মাধ্যমে যে কোনো বস্তু বা যেকোনো ব্যক্তির অবস্থান যথাযথভাবে নির্ণয়, ট্র্যাকিংসহ আরো নানা সুবিধা উপভোগ করা যায় । জিপিএস প্রতিনিয়ত স্যাটেলাইট থেকে তথ্য গ্রহন করে পৃথিবীর বিভিন্ন সার্ভারে প্রেরণ করে । গাড়ি, জাহাজ, অ্যারোপ্লেন, ল্যাপটপ, স্মার্টফোনসহ আধুনিক অধিকাংশ ডিভাইসে জিপিএস রিসিভার সংযুক্ত থাকে ।
জিপিএস যেভাবে অবস্থান নির্ণয় করেঃ
জিপিএস সেবা প্রদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৫ সালে ২৪টি স্যাটেলাইটের এমন একটি সমন্বিত স্বয়ংসম্পূর্ণ সিস্টেম স্থাপন করে যাতে করে এই স্যাটেলাইটগুলো ৬টি অরবিটে দিনে দুবার করে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে পারে এবং পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে যে কোনো সময় কমপক্ষে এর চারটি স্যাটেলাইট দৃশ্যমান হতে পারে । এ স্যাটেলাইটগুলো প্রতিনিয়ত L1 ও L2 নামক দুই ধরনের সংকেত প্রেরণ করে যাচ্ছে , যার মধ্যে L1 হলো বেসামরিক ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত । সংকেতগুলো প্রেরিত হয় আলোর গতিতে এবং এদের প্রতিটির সেন্ডিং টাইম লেখা থাকে । কোনো নির্দিষ্ট স্থানের জিপিএস রিসিভার একাধিক স্যাটেলাইট থেকে প্রেরিত সংকেতগুলো গ্রহন করার পর এদেরকে গাণিতিক ও জ্যামিতিক হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে থাকে ।